নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে তফসিল ঘোষণা করবেন। এতে ২০ ও ২৩ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হতে পারে।
তবে ২০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আজ সকালে সিইসির নেতৃত্বে কমিশন সভায় মনোনয়নপত্র জমা, যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহারের দিনক্ষণসহ তফসিলের বিস্তারিত চূড়ান্ত করা হবে। যদিও জানুয়ারিতে ভোট করার বিষয়েও একজন কমিশনারের দ্বিমত আসতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার পর কাল শুক্রবার থেকে সারা দেশে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হবে। প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখা হচ্ছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ (আরপিও) ঋণখেলাপি সংক্রান্ত বিধিতে ত্রুটি রেখেই এ তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। ৩১ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
এদিকে ইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ দেয়া ভাষণে সিইসি একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার একযোগে এ ভাষণ প্রচার করবে। বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ফিড নিয়ে প্রচার করতে পারবে।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, বৃহস্পতিবারই তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ সংক্রান্ত সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির অধীনে থাকবে। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। জানা গেছে, জাতির উদ্দেশে সিইসি ১০-১২ মিনিটের একটি বক্তব্য দেবেন। এর খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এতে সিইসি সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাবেন। একই সঙ্গে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করবেন। পাশাপাশি রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা, গাফলতি ও শৈথিল্য প্রদর্শন করলে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি থাকবে।
সিইসি তার বক্তব্যে বর্তমান কমিশনের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি উল্লেখ করবেন। নির্বাচনী আইন-কানুন এবং আচরণ বিধিমালা সংশোধনে তার কমিশনের নেয়া পদক্ষেপ জাতিকে জানাবেন। সিইসির বক্তব্যে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েন, সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়েও উঠে আসবে।
এর আগে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত কিছু দল বর্জন করেছিল। যার ফলে ওই ভোটে ১৫৩টি আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বি^তায় বিজয়ী হন। এবারেও একই ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধ অব্যাহত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে দফায় দফায় সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও তাতে আশানুরূপ কোনো ফল দৃশ্যমান হয়নি বলে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা জানান।
সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ (আরপিও) ঋণখেলাপি সংক্রান্ত বিধিতে ত্রুটি রেখেই এ তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ চলায় ৪ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার ইসির পরিকল্পনা থাকলেও পরে সরে আসে। ওই দিনই কমিশনের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় আজ বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) তফসিল ঘোষণা হবে।
এদিকে ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে আনা হয়েছে। এবারও বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
এক্ষেত্রে বর্তমানে পদায়নকৃত কর্মরতদেরই দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে কয়েকটি জেলায় পরিবর্তন আনতে পারে ইসি। এছাড়া ৮ নভেম্বর রাজধানীর গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস থেকে মনোনয়নসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম, আচরণ বিধিমালাসহ নির্বাচনীসামগ্রী বিতরণ করা হবে। দেশের সব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার উপযুক্ত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব মালামাল সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া নির্বাচনী ম্যানুয়েল ছাপার জন্য প্রেসে পাঠানো হয়েছে। রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাজের সুবিধার্থে দু-এক দিনের মধ্যে এটি পাঠিয়ে দেয়া হবে।
সীমিত পরিসরে ইভিএম : ইসির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সীমিত পরিসরে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের কথা জানানো হয়েছে। যদিও এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র আপত্তি আছে।
বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন দলের পাশাপাশি এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। তবে ইসির পক্ষ থেকে এসব আপত্তি আমলে নেয়া হয়নি। তারা জানিয়েছে, শহর এলাকায় সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
নির্বাচনের অপরাধ বিচারে বাড়ছে তদন্ত কমিটির সংখ্যা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, দলীয় কর্মী এবং সমর্থকদের নির্বাচনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গঠিত নির্বাচন তদন্ত কমিটির সংখ্যা বাড়াচ্ছে ইসি। এবার সারা দেশে দেড়শ’ কমিটি গঠন করা হবে। এতে ছয় শতাধিক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হচ্ছে। এদের প্রশিক্ষণের জন্য চিঠিও দিয়েছে ইসি। গত সংসদ নির্বাচনে তদন্ত কমিটির সংখ্যা ছিল ১৪০টি। আর নবম জাতীয় সংসদে এ কমিটির সংখ্যা ছিল মাত্র ৮০টি।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় অবদুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েনসহ ৬ দফা দাবি জানানো হয়।